ক. মাতৃভাষা
মানুষ জন্মের পর সাধারণত প্রথমে তার মায়ের কাছে প্রতিপালিত হয়, তারই কথা শেখে। তাই জন্মলগ্ন থেকে স্বাভাবিকভাবে মানুষ নিজের মায়ের কাছে যে-ভাষাটি শিক্ষা পায়, তাকেই তার ‘মাতৃভাষা’ বলে। এটি একটি ধারণার প্রকাশমাত্র। তাই যে শিশুর মা তার জন্ম-মুহূর্তেই মৃত্যুবরণ করে, সেই শিশু যখন বড় হয়, সে পিতা বা অন্য কোনো অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে বড় হলেও তার মুখের সাধারণ ভাষাকে ‘মাতৃভাষা’ই বলে । বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ জন্মের পর মায়ের কোলে এবং মায়ের বাংলা বোলে বড় হয়। বাঙালি মায়ের এই বুলি বাংলা। তাই বাঙালি জাতির মাতৃভাষা বাংলা। আবার বাংলাদেশে অনেক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বাস করে। তাদেরও পৃথক মাতৃভাষা আছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড রাজ্য; মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ইত্যাদি স্থানে বাংলা ভাষার প্রচলন রয়েছে। এসব অঞ্চলে অনেকেরই মাতৃভাষা বাংলা। তা ছাড়াও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিশ্বের বহু দেশেই বাংলাভাষী জনগণ রয়েছে। সেসব স্থানেও বাংলা অনেকের মাতৃভাষা। পৃথিবীর প্রায় ত্রিশ কোটি লোকের মাতৃভাষা বাংলা। মাতৃভাষার বিবেচনায় সারা বিশ্বে বাংলা ভাষার স্থান ষষ্ঠ।
খ. রাষ্ট্রভাষা
রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহারের জন্য কোনো দেশের সংবিধানস্বীকৃত ভাষাকে ঐ দেশের রাষ্ট্রভাষা বলে। একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভিন্ন ভাষার ব্যবহার থাকতে পারে। যেমন : বাংলাদেশে বাংলা, চাংমা, আচিক, মণিপুরী ভাষা ইত্যাদি; ভারতে বাংলা, গুজরাটি, হিন্দি, পাঞ্জাবি, কানাড়ি ভাষা ইত্যাদি; পাকিস্তানে পাঞ্জাবি, বালুচ, সিন্ধি ভাষা ইত্যাদি। এতে রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক কাজ কোন ভাষাতে পরিচালিত হবে— এই প্রশ্ন আসে। এ প্রশ্ন সমাধানকল্পে কোনো কোনো রাষ্ট্র নির্দিষ্ট এক বা একাধিক ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম ভাগের তৃতীয় অনুচ্ছেদে লিপিবদ্ধ আছে : প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা ৷
রাষ্ট্রের সর্বাধিক মানুষের বোধগম্য ভাষা হিসেবে সাধারণত রাষ্ট্রভাষা স্বীকৃত হয়ে থাকে। এ ভাষায় রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড, যেমন : শিক্ষাপ্রদান, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, সাহিত্যরচনা, সংবাদপত্র প্রকাশ, সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনা, দলিল-দস্তাবেজ লিখন, রাষ্ট্রীয় নথিপত্র লিপিবদ্ধকরণ ইত্যাদি সম্পন্ন হয়। পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষা উর্দুর পাশে ইংরেজিকেও দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে । ভারত প্রজাতন্ত্রের সংবিধানস্বীকৃত কোনো রাষ্ট্রভাষা বা জাতীয় ভাষা না থাকলেও দাপ্তরিক কাজকর্মের ভাষা হিসেবে হিন্দির পাশাপাশি ইংরেজি স্বীকৃত। ভারতের রাজ্যগুলোতে প্রশাসনিক কর্মে আঞ্চলিক ভাষাসমূহ ব্যবহার হয়। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড রাজ্য এবং আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকার অন্যতম প্রশাসনিক ভাষা বাংলা।
আরও দেখুন...